M S Dhonir জীবন কাহিন
জন্ম ও পরিবার

ধোনির বাবার জন্মস্থান ভারতের উত্তরাঞ্চলের আলমোড়া জেলার তলসালম একটি
অচেনা অখ্যাত গ্রাম। খুব ভালো চাষাবাদ না হওয়ায় অল্প লেখাপড়া জানা ধোনির
বাবা একটি চাকরীর আশায় চলে যান উত্তর প্রদেশের লখনউয়ে। সেখানে কাজ না
জোটায় তিনি চলে যান ঝাড়খণ্ডের বোকারো। কিন্তু এখানেও কোন কাজ জুটল না।
তাই আবার একটা কাজের আশায় পাড়ি জমালেন ঝাড়খণ্ডেরই রাঁচিতে। ১৯৬৪ সালে
যোগ দেন স্টিল কোম্পানিতে। এরপর ১৯৮১ সালের ৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন
মহেন্দ্র সিং ধোনি। তার পিতার নাম পন সিং এবং মায়ের নাম দেবকী। ধোনিরা তিন
ভাইবোন। ধোনির বড় এক ভাই ও বোন রয়েছে।
ধোনির ক্রিকেটার হয়ে ওঠা
স্কুলেই ধোনির ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয়। রাঁচির স্টিল কোম্পানির স্কুলে
পড়াশোনা করতেন ধোনি। প্রথমদিকে ফুটবলের প্রতি টান ছিল ধোনির। ইচ্ছা ছিল
ভালো গোলকিপার হওয়ার। একসময় ব্যাডমিন্টন, হকি ও টেবিল টেনিসের প্রতি নেশা
চেঁপে বসে। ধোনি যে স্কুলে পড়াশোনা করতেন সেই স্কুলে একজন বাঙালি শিক্ষক
ছিলেন। তিনি স্কুলের একটি ক্রিকেট টিম তৈরি করেন। কিন্তু তার দলের কোনো
উইকেটকিপার ছিল না। তাই তিনি ধোনিকে উইকেট কিপার হিসেবে খেলার কথা বলেন।
ধোনি তার কথায় রাজি হয়ে উইকেট কিপার হিসেবে যোগ দেন সেই ক্রিকেট টিমে।
উইকেট কিপার হিসেবে যোগ দিলেও অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ভালো ব্যটসম্যান
হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন ধোনি। এভাবেই স্কুল জীবনে ক্রিকেট খেলায়
হাতেখড়ি হয় মহেন্দ্র সিং ধোনির।
ধোনির বয়স যখন ১৫ বছর তখন সুযোগ পান বিহার দলে। বয়সের কোঠা ১৯ এর ঘরে
পৌঁছলে অভিষেক ঘটে ‘রনজি ট্রফিতে’। এরপর সুযোগ হয় ‘পূর্বাঞ্চল’ টিমে।
ক্রিকেটের সফলতার পাশাপাশি পড়াশোনায়ও ভালো ছিলেন ধোনি। শিক্ষাজীবনে কখনো
খারাপ ফলাফল করেননি। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর গসনা কলেজে ভর্তি হলেও
পরীক্ষা দেওয়া হয় নি। তবে ধোনি বিভিন্ন দেশের সাম্মানিক ডি-লিট পেয়ে
ডক্টরেট ডিগ্রী পেয়েছেন।
আগেই বলেছি ধোনি একসময় রেলের টিকেট চেকারের কাজ করতেন। রেল বিভাগের হয়ে
ক্রিকেট খেলতে গিয়েই লম্বা চুলের এই তরুন নজরে পড়ে যান সবার। অবশ্য ম্যাচ
খেলতে গিয়ে চাকুরি হারিয়েছিলেন তিনি। সেটাই যেন জীবন বদলে দিল ধোনির।
বিহারের অনুর্ধ-১৯ দলে ধোনি খেলেছেন সেই ১৯৯৮-৯৯ সালে। এরপর বিহার জাতীয়
দল হয়ে খেলতে খেলতেই ডাক মেলে ভারতীয় এ দলে।
ভারতীয় দলের হয়ে ধোনির শুরু

২০০৪-০৫ এ বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিলো রাঁচির এই ক্রিকেটারের।
কিন্তু শুরুটা ছিল একেবারে বাজেভাবে। রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন বিনা
রানেই। তবে লড়াকু এই ক্রিকেটার জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েননি। বিহার ও
ভারতীয় ‘এ’ দলের ধারাবাহিক পারফরমেন্সে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিলেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২৩ বলে ১৪৮ রানের অসাধারণ ইনিংসটির পরই সবার নজরে
পড়েন ধোনি। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে আইসিসি প্লেয়ার অব
দ্যা ইয়ারে ভূষিত হন তিনি। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান অর্জন
করেন।
অধিনায়ক হিসেবে ধোনির সাফল্য

ধোনির নেতৃত্বে ভারতের অনেক সাফল্য রয়েছে ৷ ২০০৭-এ জোহানেসবার্গে টি-২০
বিশ্বকাপ জয় দিয়ে শুরু৷ তার পর ২০০৭-০৮ অস্ট্রেলিয়ায় সিবি সিরিজ জয়,
২০১০-এ এশিয়া কাপ এবং ২০১১ বিশ্বকাপ এবং ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়৷
ইংল্যান্ডের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় দিয়ে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে
আইসিসি-র তিনটি ট্রফিই জিতেছেন ধোনি৷ তার অধিনায়কত্বেই ভারত টেস্টের
র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে উঠে এসেছিল। এখনো পর্যন্ত টেস্ট এবং ওয়ান-ডে
ইন্টারন্যাশনালে তার রেকর্ড ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে সেরা।
ধোনির জীবনী নিয়ে তৈরি করা হবে চলচ্চিত্র
মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করবেন পরিচালক নীরাজ
পান্ডে। এতে সুশান্ত সিং রাজপুত ধোনির চরিত্রে অভিনয় করবেন। ছবিতে একটি
ছোট শহর থেকে ধোনির আন্তর্জাতিক তারকায় পরিণত হওয়ার সব কিছুই তুলে ধরা
হবে। তবে ধোনির চরিত্রে সুশান্তকে চূড়ান্ত করা হলেও তার স্ত্রী সাক্ষি
চরিত্রে এখনো কাউকে নেয়া হয়নি। শোনা যাচ্ছে, এ চরিত্রে দীপিকা অথবা
শ্রদ্ধা কাপুরকে দেখা যেতে পারে। সব কিছু ঠিক থাকলে অচিরেই শিরোনামহীন এ
ছবির শুটিং শুরু হবে। মার্চ, ২০১৪ তারিখে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
এশিয়ায় অ্যাওয়ার্ড জয়
ক্রীড়া-ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্যের জন্য এশিয়ান অ্যাওয়ার্ড ২০১৪ পেয়েছেন
ভারতীয় অধিনায়ক ধোনি। এছাড়া মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী
খেতাবে ভূষিত করে ভারত সরকার।
ধোনির যা পছন্দ
ধোনির বড় শখ দেশি বিদেশী কুকুর পোষা। আর আছে ভিডিও গেম খেলার নেশা। কিশোর
কুমারের হিন্দি গানের ভক্ত ধোনি সিনেমা দেখায় উৎসাহী নন। দুধ খেতে খুব
ভালবাসেন ধোনি। আর ভালবাসেন আলু-ভুজিয়া। এমনিতে আগে মাছ-মাংস না খেলেও,
এখন দেশে বিদেশে ঘুরতে গিয়ে দুনিয়ার কোন খাবারেই আর অরুচি নেই ধোনির। তবে
কলকাতায় এলে ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে ভাত তার বেশ পছন্দের খাবার।
বলিউড অভিনেতা জন আব্রাহামের ভক্ত বলেই এক সময় লম্বা চুল রেখে নজর কেড়ে
নিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। হয়ে ওঠেন ফ্যাশন আইকন। বাইক ভালবাসেন তিনি।
সময়-সুযোগ মিললেই মোটর সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। রাঁচিতে তার
গ্যারেজে রয়েছে ৪টি গাড়ি। সঙ্গে ২৩টি হাইস্পিড মোটর সাইকেল।
সর্বকালের সেরা অধিনায়ক ধোনি

মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভারতীয় অধিনায়ক যিনি ২০০৭ সালে ভারতকে টি২০
চ্যাম্পিয়ন, ২০১১ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স
ট্রফি জিতিয়েছেন। এ সকল ট্রফির রাজসাক্ষী ধোনি আর তার হাত ধরেই আসে এসকল
ট্রফি। বিশ্বচ্যাম্পিয়ণ দলের অধিনায়ক ধোনি টি২০ চ্যাম্পিয়ন করানোর পর
ধেকে এ অধুরা থাকা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের আশা ব্যক্ত করেন। অবশেষে তাও
পূরণ করে একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে তিনটি ট্রফি গড়ে তোলার গৌরব অর্জন করেন।
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ৫০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ, আইপিএল,
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি টোয়েন্টি, টেস্ট এবং ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিশ্ব
র্যাংকিংয়ে সেরা দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও হাতে
তুললে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ক্যাপ্টেনের জায়গায় সে বসে
পড়বে অনায়াসেই। একমাত্র রিকি পন্টিং তার সঙ্গে তুলনীয়। পন্টিংয়ের সময়ে
অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ধরনের ক্রিকেটেই এক নম্বরে থেকেছে।
কিন্তু টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভাগ্য হয়নি পন্টিংয়ের। তাইতো ধোনি
সর্বকালের সেরা একজন অধিনায়ক ।
বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি টেস্ট হারার রেকর্ড
মহেন্দ্র সিং ধোনি অধিনায়ক হিসেবে বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি টেস্ট ম্যাচ হেরেছেন।
মহেন্দ্র সিং ধোনি (১১)

সৌরভ গাঙ্গুলি (১০)
মুহাম্মদ আজহারউদ্দিন (১০)
মনসুর আলি খান পতৌদি (১০)
বিষেণ সিং বেদী (৮)
শচিন টেন্ডুলকার (৬)
সুনীল গাভাস্কার (৬)
ধোনির নিজের কিছু কথা
এবার জেনে নিন মহেন্দ্র সিং ধোনির সাফল্যের সেই মুল মন্ত্র। আর সেটা তার জবানীতেই-
• দেখুন ট্যালেন্ট নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল দৃষ্টিভঙ্গি। চাপে পড়ে
যাওয়ার পর যদি সেটা থেকে বের হওয়ার রাস্তা যদি জানতে পারেন তবে সেটাই
ক্রিকেটের ক্রিকেটের রোমাঞ্চ।
• কে কতো বড় ক্রিকেটার। কার প্রোফাইল সমৃদ্ধ সেটা গুরুত্বপুর্ন নয়।
ফিটনেস গুরুত্বপূর্ণ। তবে ফিট থাকার জন্য আপনাকে প্রতিদিন জিম যেতে হবে না।
তবে ফিটনেস লুকানোটাও ভাল কথা নয়। লুকালে সেটা সবাই ঠিকই বুঝে নেবে।
যেমনটা হয়েছিল শেবাগ আর যুবরাজের ক্ষেত্রে।
• ওয়ানডে দলে থাকতে হলে আপনার ফিল্ডিং ভাল হতেই হবে। তা না হলে রক্ষা নেই।
• কোচিং ম্যানুয়াল পড়ার দরকার নেই। টিম মিটিং, থিওরি সেসব কিছুও আমার
দরকার নেই। মাঠে কাজ চাই। সাহস চাই। বক্তৃতা দিয়ে সময় নষ্ট করা চাই না।
• মিডিয়া কি দেখাল কিংবা কী লিখল মাথা ঘামাই না।। ওদের থেকে দুরে থাকাটাই ভালো।
• দেখুন, নিজেকে গুরুত্ব দেবেন। নিজে যেটা মনে করবেন সেটাই ঠিক মনে করে
এগোবেন। কে কি বললো সেটা একটু পড়ে ভাবলেও চলবে। তাই বলে নির্বিকার হবে না।
• একটানা অনেক ম্যাচ খেলতে হতে পারে। অমানুষিক শারীরিক কষ্ট সহ্য করার জন্য সবসময় তৈরি থাকতে হবে।
• দলের ওপর কোনও রকম নাক গলানো যাবে না। সবাই তার মতো জায়গা পাবে।
একইসঙ্গে মাঠে ভয় পেলে চলবে না। আর ফিল্ড সাজানোর সময় আমার দিকে চোখ
রাখতে হবে।
একনজরে মহেন্দ্র সিং ধোনি
পুরো নাম: মহেন্দ্র সিং ধোনি
ডাকনাম: মাহি
জন্ম: ১৯৮১ সালের ৭ জুলাই
ব্যাটিং স্টাইল: ডানহাতি ব্যাটসম্যান
ফিল্ডিং পজিশন: উইকেটকিপার
ওয়ানডে অভিষেক: ২৩ ডিসেম্বর ২০০৪, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ
টেস্ট অভিষেক: ২ ডিসেম্বর ২০০৫, প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা
টেস্ট: ৭৭; রান: ৪২০৯; গড় ৩৯.৭০; ক্যাচ: ২১২
ওয়ানডে: ২২৪; রান ৭২৮৬; গড় ৫১.৩০; ক্যাচ ২১১
টি-টুয়েন্টি: ৪২; রান ৭৪৮; গড় ৩১.১৬; ক্যাচ ২১